~ ৫ম বর্ষ ৩য় সংখ্যা - অগ্রহায়ণ ১৪২২~
বড়ে অচ্ছে লাগতে হ্যায় ইয়ে ধরতি ইয়ে নদিয়া ইয়ে রয়না...
গত ক'বছর ধরেই লাদাখ যাওয়ার ইচ্ছে, কিন্তু যাওয়া হয়ে উঠছিল না কিছুতেই নানান বাধায়। তাই এবারের পুজোতে আর সুযোগ হাতছাড়া করলাম না যতই শরীর বিক্ষোভ দেখাক আর লাদাখে বেড়ানোর 'সিজন' শেষ হয়ে আসুক না কেন!
মধ্য অক্টোবরের লাদাখের প্রকৃতিতে যেমন নিষ্ঠুরতা আছে আবার সৌন্দর্যও। রুক্ষ্ম অথচ রঙিন পাহাড়, হেমন্তের শেষবেলায় পাতা ঝরানোর আগে লাল-হ্লুদ-সবুজ গাছ, ইতিহাসে পড়া সিন্ধু নদের উচ্ছ্বলতা, শীতল মরুভূমির উদাসীনতা, আবার ঘন নীল জলের পাহাড়ি লেক আর পাহাড়ি মানুষের নির্মলতা। দেখা হলেই হাসিমুখে চেনা-অচেনা মানুষ পরস্পরকে বলেন – জুল্লে। এর অর্থ নমস্কার। স্বাগত বা বিদায় সব ক্ষেত্রেই এটা চলে।
ভ্রমণ মানে দেখা, আর এবারে আরও মনে হচ্ছে কী উপলব্ধি করলাম সেটাও।
নির্জনতা, বিশালত্ব, রুক্ষ্ম সৌন্দর্য, শান্তি... কে জানে আরো কত কী...
বড়ে অচ্ছে লাগতে হ্যায়...
লেহ্ তে আমাদের হোটেলের কেয়ারটেকার-ম্যানেজার-রুম সার্ভিস বয় একাধারে সবকিছুই ছিল একমাত্র কর্মচারী ধনগিরি বোম্ ঠোকরি। নাম শুনে আঁতকে উঠলেও, মিশতে গিয়ে মনে হচ্ছিল যেন বিভূতিভূষণের ডায়েরি থেকে উঠে আসা কোনও চরিত্র। নেপালের ছেলে - তিরিশের গোড়ায় বয়স, প্রভু যীশুর অসম্ভব ভক্ত, যীশুর বাণী প্রচার করতে গিয়ে অনেক বিপদেও পড়েছে বিভিন্ন সময়ে। বড়সড় একটা বাঁধানো খাতায় নিজের কথা, যীশুর সম্বন্ধে নিজের ধারণা, স্বরচিত ঈশ্বরগীতি এসব লিখে রাখে। ভারী হাসিখুশি মিশুকে, হাসতে হাসতে বলে অনেকে তো আমাকে পাগল বলে সবসময় যীশুর কথা বলি বলে। আমরা ফিরে আসার আগের রাতে দীর্ঘ প্রার্থনা করল আমাদের জন্য।
জীবনে চলতে চলতে কিছু কিছু চরিত্র মনে আঁকা হয়ে যায়, ধনগিরি তেমনই এক মানুষ।
একদিকে বন্ধ আর অন্যদিকে ডাল লেকের ধারে ট্যুরিস্টদের হইচই, কী আশ্চর্য জীবন এই কাশ্মীরে। যাঁরা আজ দোকান খুলেছেন তাঁরা জানেন না কাল খুলতে পারবেন কিনা। রাস্তায় যেতে যেতে ড্রাইভার ফোনে অন্যদের কাছ থেকে জানতে জানতে এগোন পথ নিরাপদ আছে নাকি অন্যপথে এগোতে হবে। রাস্তার দুপাশে সারি সারি বন্ধ দোকান, সদা সতর্ক সি.আর.পি.এফ. জওয়ান, নাকে আসছে টিয়ার গ্যাসের ঝাঁঝ, চোখ পড়ছে পথে ছড়িয়ে থাকা পাথরের টুকরোর দিকে। একটু আগেই বিক্ষোভ হয়ে গেছে। এই কাশ্মীর, এই শ্রীনগর!
এরপরেও পথেই আলাপ ড্রাইভার হাসিমুখে আমাদের সাহায্য করেন অযাচিতভাবে, পথচলতি মানুষ রাস্তার হদিস বাতলে দেন সুন্দরভাবে, জানতে চান বুঝতে পারছি কিনা, কাশ্মীরি দোকানীর সুভদ্র ব্যবহার মন ছুঁয়ে যায়।
দিল্লির রাস্তায় যত ভিখিরি চোখে পড়ল তার বড় অংশই শিশু। আসার সময় একটা বাচ্চা ছেলেকে দেখছিলাম শারীরিক কসরতের খেলা দেখাচ্ছে রাস্তার ট্রাফিক সিগনালে, ফেরার সময়ও চোখে পড়ল তাকে আরও দুই সঙ্গী সমেত। একটি মেয়ে ছোট ঢোল বাজাচ্ছে।এমনকী যে কচি বাচ্চাটাকে নিয়ে মা ভিক্ষা করছিল সেও মায়ের কোল থেকে হাত বাড়িয়ে ধাক্কা মারছিল গাড়ির জানলার কাচে হাসিমুখে, একবার হাত পাতছিল আর আরেকবার মায়ের দিকে তাকাচ্ছিল। কলকাতার ফুটপাথে ঝুপড়িবাসী ভিখারি শিশু দেখার অভ্যস্ত চোখেও রাজধানীর ঝকঝকে রাস্তায় দামী গাড়ির ভিড়ে এই বালকবালিকাদের কেমন যেন অদ্ভুত ঠেকল। এও ভারতবর্ষ!
- দময়ন্তী দাশগুপ্ত
এই সংখ্যায় -
জীবনে প্রথমবার ট্রেকিং করতে গিয়ে ঘুরেছিলেন হেমকুণ্ড, ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স, বদ্রীনারায়ণ, মানা, বসুধারা, ত্রিযুগী নারায়ণ, কেদারনাথ, গঙ্গোত্রী-গোমুখ ও যমুণোত্রী। ফিরে এসে ডায়েরির পাতায় লিখে রেখেছিলেন ভ্রমণের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কথা। - সুবীর কুমার রায়ের ভ্রমণ ধারাবাহিক 'হিমালয়ের ডায়েরি'-র ষষ্ঠ পর্ব – "অতিকষ্টে লঙ্কা ও গঙ্গোত্রী" |
~ আরশিনগর ~
সান্দাকফুর পথে চলে যেতে যেতে – পল্লব চক্রবর্তী |
~ সব পেয়েছির দেশ ~
মদমহেশ্বরের মায়ায় – সুমন্ত মিশ্র |
অমরনাথ দর্শন – শুভ্রনীল দে |
~ ভুবনডাঙা ~
ভেনিসে একটা দিন – অর্পিতা কুন্ডু চ্যাটার্জী |
~ শেষ পাতা ~
লেপচাজগতে – উদয়ন লাহিড়ি |
থর মরুভূমিতে বন্য উটের দল - আলোকচিত্রী- শ্রী সুদীপ্ত দত্ত
ভালো লাগলে জানান বন্ধুদের |
||