~ ৭ম বর্ষ ২য় সংখ্যা - শ্রাবণ ১৪২৪ ~
"যাবে তো যাও নীলপাহাড়ি
সেথায় নড়ে সবুজ দাড়ি..."
- তা পথে নীলপাহাড়ি দেখলাম, রংলি রংলিওট চা বাগানও।
তবে সবুজ দাড়িটাড়ি বাপু চোখে পড়েনি। বদলে পাহাড়ের ঢালে একটা নীল-সবুজ ঝলমলে ময়ূর।
বুদ্ধ পূর্ণিমা। পথে স্থানীয় মানুষের ঢল - উৎসবের আমেজ চা বাগানের ফাঁকে ফাঁকে ছোট-বড় গুম্ফাগুলির আশপাশে। গন্তব্যে পৌঁছতে বিকেল গড়িয়ে গেল। জিনিসপত্র নামিয়েই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ি। পায়ে পায়ে অনেকটা পাহাড়ি বনপথে নেমে গিয়ে ছোট্ট একটা গুম্ফায় পৌঁছাই। পাঁচদিন ধরে চলা অনুষ্ঠান, পুজো-আচ্চা তো শেষ। নামতে নামতেই দেখছিলাম বিরাট সব ড্রাম, শিঙা নিয়ে উঠে আসছেন লোকজনেরা। আবছা অন্ধকার গুম্ফায় জ্বালানো হালকা আলোয় চমৎকার একটা পারিবারিক পরিবেশ ধরা দিল চোখে। ছোট্ট একটা শিশু হামা টানছে। তার মা আমাদের বসতে বলে গরম গরম তিন কাপ চা এনে দিলেন। কী যে ভালো লাগল। সারাদিনের ক্লান্তি অনেকটা জুড়িয়ে গেল। গুম্ফায় আরও কয়েকজন পুরুষ রয়েছেন, লামা-পুরোহিত ছাড়াও। ফুল গুছাতে গুছাতে গল্প করছিলেন মহিলা – এই গুম্ফাটা তাঁদের পারিবারিক। পাহাড়ের আরও নীচে বাড়ি। এবার গুম্ফা বন্ধ করে বাড়ি ফিরে রান্না বসাতে হবে। লামা-পুরোহিতের ইঙ্গিতে প্রসাদ দেন হাতে হাতে। লোডশেডিং হয়ে যায়। ওদিকে পাহাড়ের গা বেয়ে সন্ধ্যা নামছে ঝুপ ঝুপ করে।
ফেরার পথে অন্ধকার হয়ে আসে। নিস্তব্ধ রাত্তিরে কুকুরের ডাক ছিল বটে, তবে কক্ষনো হাঁড়িচাচায় গান ধরেনি। আর হোমস্টে-এর মাথায় পূর্ণিমার চমৎকার চাঁদের গা দিয়ে কালো মেঘ ভেসে যাওয়ায় যখন সাইকো সিনেমার একটা শট মনে পড়ছিল, কন্যা আর আমি ওয়্যারউলফের ডাক ডাকার একটা চেষ্টা করছিলাম জোরসে।
রাত্তিরে খেয়ে ওঠার সময় সিঁড়িতে কী একটা ভয়ানক ঠক ঠক করছিল ঠিকই, কিন্তু গোটা হোমস্টেতে অতিথি বলতে সেদিন রাতে শুধু আমরা তিনজন থাকলেও কুন্ডুমশাই মোটেও মুণ্ডু নাচাতে আসেননি। সেটা মেসির জন্য কিনা তা অবশ্য বলতে পারব না।
ওমা, মেসি কে তাও বলিনি বুঝি! বাদামী রঙের মস্ত বড় আদুরে কুকুরটা। ওই ওদেরই পোষ্য। অন্ধকার রাত্তিরে যখন দূরের পাহাড়ের গায়ে জ্বলে থাকা আলোগুলো দেখছিলাম দুজনে, সে চুপ করে শুয়ে ছিল আমাদের পায়ের কাছে। তারপর সারারাত ঘরের সামনে পাহারায় থাকল।
সকালে তুমুল বৃষ্টি। বেড়াতে গেলেই ভোরবেলায় ঘুম ভেঙে যায়। চাদর জড়িয়ে দরজার সামনেটায় চেয়ার টেনে বসি। হাতে সিলভিয়া প্ল্যাথের আনঅ্যাবরিজড জার্নাল। পড়ি তাঁর ছেলেবেলার সুখ-দুখের কথা। মাঝে মাঝে সামনে তাকিয়ে থাকি অনেকক্ষণ। বৃষ্টিতে ঝাপসা হয়ে গেছে দিগন্ত, পাহাড়, পাইন গাছের সারি। তাকিয়ে থাকতে থাকতে কেমন একটা ঘোর লেগে যায় যেন।
বৃষ্টি থামতে দুজনে বেরিয়ে পড়ি। চা বাগান আর পাইন গাছের ভেতর দিয়ে পাকদণ্ডী বেয়ে ঘুরে এলাম পায়ে হেঁটে। হ্যাঁ, মেসিই তো পথ দেখিয়ে শর্টকাট চিনিয়ে নিয়ে এল।
কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা দিল না, তা হোক, সত্যিই তিনচুলে বেশ ফাইন।
মেয়ের আই এস সি পরীক্ষার পর বেড়াতে গিয়েছিলাম তিনজনে। ফিরে এসে বড্ড শরীর খারাপ হল, টানা অনেকদিন ধরে। মাঝে তো 'আমাদের ছুটি' বেরোনোই অনিশ্চিত হয়ে উঠছিল। শেষপর্যন্ত হল, কিন্তু ধারাবাহিক লাদাখ পর্বের এবারের চিঠিটা লিখে উঠতে পারলাম না। তার জন্য পাঠকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
বৃষ্টির দিনগুলো ভালো কাটুক আপনাদের। সবুজ হোক, সজল হোক। আর যাঁদের কাটছে কষ্টে – প্রকৃতির খামখেয়ালে নাকি অপরিকল্পিত উন্নয়নের কল্যাণে - তাঁদের সে দিন পেরোক। উৎসবের মরসুম আসছে, আনন্দে কাটুক সকলের।
- দময়ন্তী দাশগুপ্ত
এই সংখ্যায় -
- দময়ন্তী দাশগুপ্তের ধারাবাহিক 'ভ্রমণকারী বন্ধুর পত্র - লাদাখ পর্ব'-এর চতুর্থ পত্র অনিবার্য কারণে প্রকাশিত হল না। পরবর্তী সংখ্যায় যথারীতি প্রকাশ করা হবে। |
~ আরশিনগর ~
~ সব পেয়েছির দেশ ~
কালাপানির অন্দরমহলে - পর্ণা সাহানা |
পলকাটা হিরে – ওরছা - অভিজিৎ কুমার চ্যাটার্জি |
নীল পাহাড়, অর্কিড আর আত্মঘাতী |
ইতিহাসের মেবারে - হিমাদ্রি শেখর দত্ত |
~ ভুবনডাঙা ~
এবার ভুটান – দেবাশিস বসু |
~ শেষ পাতা ~
ওয়ান্ডুর বিচে সূর্যাস্ত, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ – আলোকচিত্রী- পর্ণা সাহানা
ভালো লাগলে জানান বন্ধুদের |
||