~ ৩য় বর্ষ ৩য় সংখ্যা - কার্তিক ১৪২০~
শরৎকালের মজাটাই হচ্ছে যেই শহরের উঁচু উঁচু বাড়িগুলোর ফাঁক দিয়ে ঝকঝকে নীল আকাশ আর সাদা সাদা পেঁজা মেঘ চোখে পড়ে অমনি মনে হয় অন্য কোথাও যাই – পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল বা যেখানে হোক – কেউ যেন ডাক পাঠায়। আর অমনি ব্যাগ গুছিয়ে দে ছুট্। তবে ছুটব বললেই তো ছোটা যায়না। তাও ভাগ্যিস ট্রেনের টিকিট কাটার সময়টা কমিয়ে আবার দুমাস করেছে। নইলে মাঝেতো পুজোয় বেরোব ভাবলে প্রায় বছরের গোড়া থেকেই ভাবনা শুরু করে দিতে হত।
একেক সময় মনে হয় কেন একশ বছর আগে জন্মাইনি? এবার পুজোর ছুটিতে লুপ্ত হয়ে আসা অজন্তা গুহাচিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হতে হতে আবারও সে কথাই মনে হচ্ছিল। পঞ্চাশ বছর আগে নারায়ণ সান্যালের দেখা বহু ছবিও আজ আর নেই। তবু এখনও যেটুকু আছে তা দেখতে পেয়েও নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে হয়। এক নম্বর গুহায় সেই ছোটবেলায় ইতিহাস বইয়ের পাতায় দেখা পদ্মপাণির ছবি নস্টালজিক করে তোলে। আমিতো সেই কবেই আসতে চেয়েছি...। তবে অজন্তাকে ঠিকমত অনুভব করা সম্ভব হত না নারায়ণ সান্যালের বইটি না থাকলে। বার বার পড়ার পর যখন ছবিগুলি চোখের সামনে দেখি তখন যেন মহাজনক জাতক, মহাকপি জাতক, ছদন্ত জাতক, বিধূর পণ্ডিত জাতক – একের পর এক গল্প শুনতে পাই নিজের মনেই। কাহিনির টানেই ঊনিশ নম্বর গুহার দ্বারে এসে খুঁজে নিই বুদ্ধের স্ত্রী-পুত্রকে ভিক্ষাপাত্র দানের মূর্তিটি। সতের নম্বর গুহার বারান্দার দেওয়ালের উঁচুতে ছেঁড়া ছেঁড়া অনেক ছবির মাঝে চিনতে ভুল হয়না অসামান্যা সুন্দরী কৃষ্ণা অপ্সরাকে। কিম্বা তাকিয়ে থাকি ছাব্বিশ নম্বর গুহায় শেষ শয্যায় শায়িত বুদ্ধের নীচে নিভে যাওয়া প্রদীপটির দিকে।
ইলোরায় আবার মুডটা একটু আলাদা – জমকালো, রাজকীয় ব্যাপার – বিরাট বিরাট সব মূর্তি। ষোল নম্বর গুহায় কৈলাস মন্দির দেখলে লালমোহনবাবুর মতোই বলতে হয় – স্তব্ধভাষ, রুদ্ধশ্বাস, বিমুগ্ধ, বিমূঢ়, বিস্ময়...।
মানুষের অত্যাচারে অজন্তার অধিকাংশ ছবিতো আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। এখনও যাচ্ছে, যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে আর নারায়ণ সান্যালের ভাষায় বললে মানুষের গন্ধে, ঘামে। ইলোরায় যথেষ্ট গার্ডের অভাবে লোকজন মূর্তির কোলে চড়ে ছবি তুলছে। বিবি কা মকবারার পিছনে ডানদিকে দেওয়ালে সিমেন্টের ওপর একটু লক্ষ্য করলেই চোখে পড়ে কেউ হাজরা লিখে রেখেছে। ভাবতেই শিউরে উঠতে হয় যে অদূর ভবিষ্যতে এমন একটা দিন আসতে চলেছে যেদিন অজন্তায় শুধু শূন্য গুহাগুলোই পড়ে থাকবে। আমরা সত্যিই তাই চাই কি?
আনন্দ উৎসবের মাঝেই ওড়িষার সাইক্লোনের কথা জেনে আবারও শঙ্কিত হয়ে উঠেছিলাম। আপতকালীন তৎপরতায় তা সামলানো গেছে এটাই সবথেকে ভালো খবর।
'আমাদের ছুটি'-র বন্ধুদের সবাইকে ঈদ আর বিজয়ার শুভেচ্ছা। ভালো থাকুন সক্কলে।
- দময়ন্তী দাশগুপ্ত
এই সংখ্যায় -
"'সেই খোলা আকাশের নীচে শুয়ে আমার মনে হল আর ফিরতে পারব না। ওই অবস্থায় যদি আমি সারারাত পড়ে থাকি তার পরিণতিটা আমি ভালোভাবেই জানি... একটা হতাশার ভাব আসল – কিছুতো করার নেই, আমি উঠতে পারছি না, ওরা চলে গেছে...। কিন্তু সেটা খুব বেশিক্ষণ থাকল না। তারপরেই মনে হল, আমার কিছু হবে না, আমি বাঁচব।' – দীর্ঘ চব্বিশ-পঁচিশ বছর ধরে পাহাড়ই ধ্যান-জ্ঞান এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা ও অন্নপূর্ণা সহ আঠারটি শৃঙ্গজয়ী বসন্ত সিংহ রায়ের। ধৌলাগিরি অভিযানে প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার পর এতদিনে মিলল ভারত সরকারের তরফে 'তেনজিং নোরগে অ্যাডভেঞ্চার পুরস্কার' এবং রাজ্য সরকারের তরফে 'রাধানাথ সিকদার ও তেনজিং নোরগে পুরস্কার'। বেঁচে ফেরা এবং পুরস্কার পাওয়া এই দুই বিপরীত অনুভূতির কথা উঠে এল বসন্তদার সঙ্গে আমাদের ছুটির আড্ডায়। |
~ আরশিনগর ~
ঘনাদার শ্বশুরবাড়িযাত্রা – অথঃ কোচবিহারকথা - রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য |
~ সব পেয়েছির দেশ ~
স্বপ্নের দেশে কয়েকদিন – সুমিতা সরকার |
~ ভুবনডাঙা ~
পুজোয় প্রবাসে – মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় |
আমেরিকার 'কার্নিভাল স্প্লেনডর' ও কলকাতার বনানীদি – বনানী মুখোপাধ্যায়় |
~ শেষ পাতা ~
রহস্যময় আন্ধারমানিক – জিয়াউল হক শোভন |
পৃথিবীর চূড়ায় - এভারেস্ট শিখরের কয়েক পা আগে
আলোকচিত্রী- শ্রী বসন্ত সিংহরায়
ভালো লাগলে শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে - |
||