~ ৪র্থ বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা - মাঘ ১৪২১~
বলেন কী মশায়, দুটো ছবির জন্য দুশো কিলোমিটার তাও আবার দু-দুবার! – জটায়ু থাকলে নির্ঘাৎ এই কথাই বলতেন 'শান্তিনিকেতনে সাসপেন্স'-এ।
প্রায় রহস্য সমাধানের মতই কয়েকমাস ধরে ঘুরে ঘুরে খোঁজা আর শেষ মাস দুয়েক যাবৎ প্রবল টেনশনে থাকার পর লেখা-ছবি সব উদ্ধার করে অবলা বসুর জন্মের সার্ধশতবর্ষে ক্ষুদ্র প্রয়াস 'অবলা বসুর ভ্রমণকথা' - 'পরশপাথর' প্রকাশনার সৌজন্যে।
পেছনে রয়ে গেল অনেকটা অকথিত ভ্রমণ কাহিনি অথবা না-ভ্রমণ কথা। জাতীয় গ্রন্থাগার, সাহিত্য পরিষৎ লাইব্রেরি, চৈতন্য লাইব্রেরি, সেন্টার ফর স্টাডিজ, গোলপার্কে রামকৃষ্ণ মিশন লাইব্রেরি, কলকাতা-যাদবপুর- রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার, উত্তরপাড়ার জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরি, বালি লাইব্রেরি, বাগবাজার রিডিং লাইব্রেরি, ব্রাহ্ম সমাজ লাইব্রেরি, এশিয়াটিক সোসাইটির গ্রন্থাগার, বসু বিজ্ঞান মন্দির, ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়, নারী শিক্ষা নিকেতন, জগদীশচন্দ্র-অবলার নিজেদের বাড়িতে – অবলার লেখা খোঁজার জন্য অধিকাংশ জায়গায় হানা দিয়েছি সশরীরে কোথাওবা পরিচিত কাউকে খোঁজ নিতে বলেছি যদি কোনও 'ক্লু' পাওয়া যায়। কখনও অযাচিত ভালো ব্যবহার পেয়েছি, কখনওবা নিবিড় উদাসীনতা। কোথাওবা নিতান্ত বেঁচে গেছি গলা ধাক্কা খাওয়ার থেকে। অকপটে সাহায্য চেয়েছি, অকপটে সাহায্য পেয়েছি-ও পরিচিত-অপরিচিতের কাছে, আবার কখনওবা আতঙ্কিত হয়েছি 'কেস'টা বোধহয় অন্য কারোর হাতেই চলে গেল এই ভেবে, আহত হয়েছি মানুষের ব্যবহারে, ভুল বোঝায়। ব্যাগ কাঁধে কলকাতার রাস্তায় একা একা হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়েছে সত্যি বাঙালি বড় আত্মবিস্মৃত জাতি। মনে হয়েছে, আজ আমি লেখাপড়া শিখে যে স্বাধীন জীবন যাপন করছি তার পিছনে শুধু রামমোহন-বিদ্যাসাগর নন, তার থেকে অনেক বেশি ভূমিকা আছে সেইসব মেয়েদের যারা প্রথম স্বাধীনতার আকাঙ্খায় সমাজের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ঘরের বাইরে পা রেখেছিল, কলম তুলে নিয়েছিল সেই সাহসিকতার কথা অন্য মেয়েদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। তাঁদের কাছে প্রতিটি শিক্ষিত বাঙালি মেয়েরই কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। চৈতন্য লাইব্রেরির সুদীপবাবু আমি কাজটা ভালোলাগা থেকে করছি জেনে প্রশ্ন করেছিলেন, 'সখ?' হাঁটতে হাঁটতে মনে হল – দায়বদ্ধতা বোধহয় আরও বেশি।
নারী শিক্ষা এবং নারী স্বাধীনতা নিয়ে শুধু কথা নয়, হাতে কলমে কাজ করেছিলেন অবলা। তাঁরই অর্থে এবং সাধনায় গড়া ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে শুনি, আমাদের কাছে অবলা বসুর কিছু নেই-টেই...। বসু পরিবারের বাড়িটি যে ট্রাস্টির হাতে রয়েছে, তাঁদের আমন্ত্রণে অবলা বসুর জন্মের সার্ধ শতবর্ষের অনুষ্ঠানে গিয়ে কোথাও প্রায় অবলার অস্তিত্বই খুঁজে পাইনা। খুব বিনীতভাবে বইটির কথা প্রচারের জন্য জানালে শুনতে হয় - ওইতো একজন অবলা বসুর ভ্রমণের কথা বললেন, আবার কী? আয়োজক সংস্থাগুলির কার্যের বিজ্ঞাপনী প্রচার চলে একের পর এক। লাঞ্চে ফ্রায়েড রাইস, চিকেন চাঁপ ইত্যাদির প্যাকেট নিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবি যাক অবলা বসুর কল্যাণে এবেলা বিনি পয়সার ভোজ তো হল। এমন রোমাঞ্চকর সব ভ্রমণ আমার হতেই থাকে।
আবার নারী শিক্ষা সমিতির কাছ থেকে আন্তরিক সহায়তা পেয়ে আর অবলা বসুর স্মরণে আয়োজিত ছোট্ট ঘরোয়া অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত হয়ে আশ্বস্ত হই এই ভেবে যে এখনও কেউ কেউ সেই মহীয়সীকে মনে রেখেছেন।
শেষপর্যন্ত তাই শান্তিনিকেতনে বারবার। একা নয়, সপরিবারেই। সেও আরেক কাহিনি..। এই দুবারে একবারও ভালো করে ঘুরে দেখিনি রবীন্দ্রনাথের বাড়ি-ঘর-পাঠশালা। কে যেন আমায় বলেছে বিশু পাগল আজকাল আর ওখানে থাকেনা।
নতুন বছরে অবলা বসুকে নতুন করে খুঁজে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে পেরে আমার মন ভালো হয়ে গেছে। আপনারাও ভালো থাকুন সকলে, 'আমাদের ছুটি'-র সঙ্গে নতুন আর পুরোনো ভ্রমণে, ভ্রমণ কাহিনিতে।
- দময়ন্তী দাশগুপ্ত
এই সংখ্যায় -
"কতক পথ যাইতে না যাইতে অর্দ্ধ-প্রকাশিত, অর্দ্ধ-লুক্কায়িত ভাবে নীলাকাশ স্পর্শ করিতে করিতে তাজমহলের ধবল প্রস্তর নির্ম্মিত অপূর্ব দীপ্তিময় শিল্প-প্রভার উজ্জ্বল গৌরব আমাদিগের দৃষ্টিপথে সহসা প্রতিভাত হইল, এবং সেই স্বপ্নময় স্মৃতিমাখা তাজের গগণস্পর্শী শ্বেত চূড়া কতক দেখিয়াই কেমন যেন এক মোহ স্বপ্নে ডুবিয়া গেলাম।" - 'আর্য্যাবর্ত্তে বঙ্গমহিলা' (আগ্রাপর্ব) প্রসন্নময়ী দেবীর কলমে |
~ চরৈবতি ~
জীবনে প্রথমবার ট্রেকিং করতে গিয়ে ঘুরেছিলেন হেমকুণ্ড, ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স, বদ্রীনারায়ণ, মানা, বসুধারা, ত্রিযুগী নারায়ণ, কেদারনাথ, গঙ্গোত্রী-গোমুখ ও যমুণোত্রী। ফিরে এসে ডায়েরির পাতায় লিখে রেখেছিলেন ভ্রমণের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কথা। - সুবীর কুমার রায়ের ভ্রমণ ধারাবাহিক 'হিমালয়ের ডায়েরি'-র এবারে তৃতীয় পর্ব – "বদ্রীনারায়ণ থেকে মানা ও বসুধারা" |
~ আরশিনগর ~
|
~ সব পেয়েছির দেশ ~
|
~ ভুবনডাঙা ~
|
~ শেষ পাতা ~
ভার্সের চিঠি – বর্ণালী রায় |
তাজমহলে সকাল - আলোকচিত্রী- শ্রী সিদ্ধার্থ পাল
ভালো লাগলে জানান বন্ধুদের |
||