~ ৫ম বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা - মাঘ ১৪২২~
দৃশ্য এক
আমাদের ফ্ল্যাটের সামনের রাস্তা পাকা হচ্ছিল। রাস্তার ওপারে যে পেয়ারা গাছটায় একদিন একটা ছেঁড়া ঘুড়ি লটকে ছিল, আর বারান্দা থেকে দেখে আমি দু-লাইন লিখেছিলাম, সেই গাছটা কাটা পড়েছে। একটি বৃক্ষের হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, অথচ আমরা কেউ কিচ্ছু বলিনি। অসহায় গাছটা মড়মড় শব্দে নুয়ে পড়েছিল ক্রমশঃ। পাড়ার লোকে পেয়ারার জন্য আফশোস করছিল, ওদিকে তখন গাছটা ভেঙে পড়ছিল টুকরো টুকরো হয়ে।
দৃশ্য দুই
একটা চিৎকার শুনে বারান্দায় বেরিয়ে দেখি, মাঝবয়সী দুটো বউ, হাতে অল্প কয়েকটা জামাকাপড়, 'আমাদের কিছু জামাকাপড় দাও গো..., ও মা, বৌদিরা, আমাদের ঘর ভেসে গেছে...' – দু'হাত মাথার ওপরে তুলে অনেকটা গৌরাঙ্গ ভঙ্গীতে চাইছে। বাড়ি কোথায়, জিজ্ঞাসা করলে একজন জানায়, 'সুন্দরবন, ঘর ভেসে গেছে মা'।
বিষ্ণু দে-র 'পরবাসী' কবিতা মাথায় ঘুরছে -
জঙ্গল সাফ, গ্রাম মরে গেছে, শহরের
পত্তন নেই, ময়ূর মরেছে পণ্যে।
কেন এই দেশে মানুষ মৌন অসহায়?
কেন নদী গাছ পাহাড় এমন গৌণ?
মাথায় আটকে গেল বাক্যটা – 'কেন নদী গাছ পাহাড় এমন গৌণ?' আসলে সাধারণ মানুষ ও তার জীবন গৌণ হলেই বাকি সবকিছুও গৌণ হয়ে ওঠে ক্রমে। সবই যদি গৌণ তবে আমাদের বাসভূমিই বা কোথায় হবে? কোথায় যাব আমরা জীবনে বা ভ্রমণে? তাঁবু বওয়াই সার হবে যে শুধু সারাজীবন।
বাপ্পাদার লেখা 'বনবিবি বেত্তান্ত' পড়তে পড়তে ভাবছিলাম, বনবিবি, দক্ষিণ রায় – দেবতা যেখানে প্রকৃতপক্ষে মানুষ, তাঁরা কেউই বাঁচাতে পারবেন না সুন্দরবনের মাটি, অরণ্য, ভূমিপুত্রদের। সভ্যতা ধ্বংস করবে, গ্রাস করবে যাবতীয় কিছুকে।
বাউল-ফকির মেলায় গিয়ে ধর্ম এবং জাত-পাতের বিরুদ্ধে এই সাধারণ মানুষগুলোর লড়াই করে বেঁচে থাকার কথা শুনছিলাম গানের আবহে। যত বিভেদ আর দূরত্ব বাড়বে ততোই ভাঙবে বাসভূমি, মরবে মানুষ।
ভ্রমণ কখনোই শুধুমাত্র কতিপয় সুখী মানুষের অবসরযাপন ক্রিয়া নয়, কোনোদিনই তা ছিলও না। সার্থক এবং সম্পূর্ণ ভ্রমণ কাহিনির পেছনে থাকে একটা বৃহত্তর সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। যা বহন করে সেইসময়ের ইতিহাসকেও।
'ডিজিটাল ইন্ডিয়া' হলে হয়ত 'আমাদের ছুটি' অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে। কিন্তু তার আগে যে ভূমি এবং ভূমিপুত্রদের স্বাভাবিক জীবনে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন, শিক্ষার প্রয়োজন, আর্থিক সেই ভারসাম্যের প্রয়োজন যা তাদের অবসর দেবে, ভ্রমণ করার মানসিকতা তৈরি করবে, তৈরি করবে মানসভ্রমণে আনন্দ পাওয়ার সময় ও সুযোগ। যে মানুষ খেতে পায় না, যার বাসভূমি নেই, যার শিক্ষা নেই সে কী করেই বা বেড়াবে আর কী করেই বা পড়বে?
নতুন বছরে নতুন নতুন জায়গায় বেড়ানোর পাশাপাশি আমাদের পুরোনো পৃথিবীটাকে নিজেদের জন্যই একটু বেশিদিন ভালো রাখার চেষ্টা করতেই পারি তো সকলেই একটু হলেও।
ভালো থাকার শুভেচ্ছা সব বন্ধুদের।
- দময়ন্তী দাশগুপ্ত
এই সংখ্যায় -
জীবনে প্রথমবার ট্রেকিং করতে গিয়ে ঘুরেছিলেন হেমকুণ্ড, ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স, বদ্রীনারায়ণ, মানা, বসুধারা, ত্রিযুগী নারায়ণ, কেদারনাথ, গঙ্গোত্রী-গোমুখ ও যমুণোত্রী। ফিরে এসে ডায়েরির পাতায় লিখে রেখেছিলেন ভ্রমণের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কথা। - সুবীর কুমার রায়ের ভ্রমণ ধারাবাহিক 'হিমালয়ের ডায়েরি'-র এবারে সপ্তম পর্ব – কঠিন পথে গোমুখে |
~ আরশিনগর ~
আরশিনগরে – দময়ন্তী দাশগুপ্ত |
~ সব পেয়েছির দেশ ~
সাতকোশিয়ার অরণ্যে – পল্লব চক্রবর্তী |
মান্ডভির সৈকতে – হিমাদ্রী শেখর দত্ত |
~ ভুবনডাঙা ~
আমার দেখা চিন – শ্যামলেন্দুবিকাশ সরকার |
~ শেষ পাতা ~
রুপোলি রেশি আর সোনালি সিলারি গাঁও –পল্লব ব্যানার্জি |
সূর্যাস্তের আগুনে রাঙা এভারেস্ট - আলোকচিত্রী- শ্রী শুভজিত চৌধুরী
ভালো লাগলে জানান বন্ধুদের |
||