~ ৬ষ্ঠ বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা - মাঘ ১৪২৩ ~
সকলেরই যাওয়া থাকে, একটা গন্তব্য থাকে, ফিরে আসাও থাকে যথাসময়ে। এরই নাম হয়তো ভ্রমণ যা জুড়ে থাকে আজীবন।
হালকা ভিড়। ট্রেন দিয়ে দিয়েছিল বেশ খানিকক্ষণ। অসংরক্ষিত কামরাগুলো ভরে উঠেছে তাই। ইতস্তত দেখতে দেখতে এক জায়গায় সাদর আমন্ত্রণ পাই - আইয়ে মেমসাব। আপকে লিয়ে হি খালি রাখখা হুঁ। অবাক হলেও বসে পড়ি জমিয়েই। ব্যাগপত্তর ওপরে তুলে দিই। সামনে একটি মুসলিম পরিবার। মাঝবয়সী বউটি মিটিমিটি হাসে। চেহারায় তেমন কোনও বৈশিষ্ট্য নেই যে আঁকা যাবে। পাশে বছর নয়-দশের গোলাপী- কমলা সালোয়ার কামিজে চঞ্চল মেয়ে। মায়ের পরণে কালোতে-হলুদে সালোয়ার কামিজ, মাথায় ওড়নার ঘোমটা। স্বামীটির চেহারাও একেবারে সাদামাটা। অল্প কাঁচাপাকা চুল-দাড়িতে ঝিমন্ত মুখ। এপাশে ওপাশে আরও আরও বিশেষত্বহীন মহিলা-পুরুষের মুখ। কেউ ব্যস্ত শিশু নিয়ে, কেউ মোবাইল। কেউবা জানলার দিকে উদাসীন। এরাই হাসিমুখে তাকায়। বসতে দেয় ডেকে। এরাই ভারতবর্ষ।
ট্রেন স্লো হয়। হঠাৎ আবির্ভাব ঘটে এক হিজড়ে রমণীর। হাততালি আর হাসির বিনিময়ে কিছু টাকা নিয়ে নেমে যায় স্টেশনে থামার আগেই চলন্ত ট্রেন থেকে। ওদিকে কচি বাচ্চা নিয়ে ওই চলন্ত ট্রেনেই উঠে পড়ে আরেক পরিবার - লোকজনের সাবধানতার আর্তনাদের পাশ কাটিয়ে।
মাঝের জংশন স্টেশনে ট্রেন একটু বেশিক্ষণ দাঁড়াতেই ভিড় বাড়ে। এক কাশ্মীরি পরিবার কোলে-কাঁখে বাচ্চা নিয়ে উঠে পড়ে। সিটের ফাঁকে ফাঁকে গুঁজে যায় কয়েকজন। বাকিরা ওপরে বাঙ্কে। এবারে বন্ধ পাখার ওপরে জমছে জুতো-চটি। অনেকবার দেখেছি এ দৃশ্য, তবু মনে পড়ছে কাঞ্চনের লেখা - 'জিস দেশ মে গঙ্গা বহতি হ্যায়'। বৌটি সবার ছোটটিকে কোলে নিয়ে বসে। আলু চিপস বাচ্চার মুখেও দেয়, তারপর নিজের মুখে ফেলে বলে, নুন। ওপর থেকে বড় দুজন চাইলে চোখ পাকিয়ে বকে - চুপ। বাবা আবার তাদের জন্যও কেনে। বিস্কুটে, চিপসে খুশী বাচ্চারা, সবারই হাতে হাতে কিছু ধরিয়ে দিয়েছে বাবা-মা।
এবারে ঝালমুড়িওলার সঙ্গে গুঁতোগুঁতি লেগেছে পরের চিপসওলার। ঝালমুড়ির বিক্রি দেখে সে বিরক্ত হয়ে পাশ কাটাতে গিয়ে বাধা পেয়ে ট্রেনটি ঝালমুড়িওলার পৈত্রিক সম্পত্তি কিনা সেই বিষয়ক গালাগালি দিয়ে ওঠে। ঝালমুড়িওলা অভ্যস্ত নির্বিকার। ওদিকে টাক দুমাদুম আওয়াজ পেয়ে সচকিত হই। সামনের চঞ্চল মেয়েটি বাবার কোলের ওপর দিয়ে উঁকি দিয়ে আপনমনে হেসে লুটায়। এতক্ষণে তার ও তার মায়ের সঙ্গে ভাবও হয়েছে খানিক। নাম তার মীনা। মীনার মা মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে কলকাতায় বাপের বাড়ি থেকে ফিরছে জম্মুতে নিজের ঘরে। ছেলে আছে সেখানে। মীনা আর তার বাবার খুনসুটি চলছে প্রায় সারাক্ষণ।
তাকিয়ে দেখি ছোট্ট একটি বাচ্চা কোলে নিয়ে মা, হাতে ছোট ঢোলক। সেই ঢোলকের তালে তালে হাতে লোহার রিং নিয়ে শারীরিক কসরত দেখায় বড় মেয়ে। বয়স বছর ছয়-সাত হবে হয়তো। শিশু দেখে অনেকেই তার বাটিতে, হাতে টাকা-পয়সা দেয়। মায়ের কোল থেকে অবোধ ছোটটি হেসে ওঠে একবার।
মীনার মায়ের সঙ্গে টুকটাক কথা হচ্ছে কাশ্মীরি বৌটির। মীনার মায়ের মৃদু কন্ঠস্বর প্রায় শোনা যায় না। অন্যজনের জীবনকাহিনির আভাস পাই পরের বড় স্টেশন আসতে আসতেই - এদিককারই মেয়ে। বাপ-মা নেই। খালা বিয়ে দিয়ে দিয়েছে এত দূরে। একবার গেলে আবার কবে ফিরব কে জানে! কিছু বলার ছিল না। তবে জীবনে খাওয়া তো বড় কথা নয়, ভালো থাকাটাই আসল। ভারতবর্ষ এবার কথা বলে ওঠে পরিষ্কার বাংলায়।
বৌটি দুরন্ত ছোটটিকে সামলাতে না পেরে হাসতে হাসতে যেন সবাইকে উদ্দেশ্য করেই জোরে বলে ওঠে, ইয়ে বঙ্গাল কা বাচ্চা তো নেহী কাশ্মীরকা বাচ্চা। কাশ্মীরকা আদমী ভি কুছ নেহী শুনতা, বচ্চা ভি। ওদিকে চানাওলা চানা মাখতে মাখতে অমরেশ পুরীর সিনেমার কথা বলে তার ক্রেতাকে। হঠাৎ কানে আসায় কার্যকারণ বুঝে উঠতে পারিনা।
সকালেও খুব ঠান্ডা ছিল। বেলা বাড়তেই ঝলমলে রোদ্দুর। জানলার বাইরে সবুজের সমারোহ, কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি, ঝমঝম করে ব্রিজ পেরোল গঙ্গার।
সেও তো অনেকক্ষণ। এখন দুপাশে ধান কাটা আদিগন্ত ন্যাড়া ক্ষেত, আঁকাবাঁকা আল আর মাঝে মাঝে এক একটা ঝাঁকড়া সবুজ গাছ।
সব পেছনে ফেলে এগিয়ে যাই।
- দময়ন্তী দাশগুপ্ত
এই সংখ্যায় -
উটের পিঠ থেকে পৃথিবীটা ভারী চমৎকার লাগছিল। সামনে দিগন্তবিস্তৃত বালুভূমি। দুপাশে পাহাড়। দূরে গাছপালা। আর আকাশে গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা মেঘ ভিড় করে এসেছে যেন। দূরে দেসকিট মনাস্ট্রি দেখা যাচ্ছে। - ধারাবাহিক 'ভ্রমণকারী বন্ধুর পত্র - লাদাখ পর্ব'-এর দ্বিতীয় পত্র দময়ন্তী দাশগুপ্তের কলমে |
কচ্ছের রান – সীমাহীন ধবলতা ও মনু সাঁইয়া |
~ আরশিনগর ~
দুর্গাপুর – ইতিহাসের খোঁজে – তপন পাল |
~ সব পেয়েছির দেশ ~
স্বর্গরাজ্যের সপ্তহ্রদ – পর্ণা সাহানা |
~ ভুবনডাঙা ~
স্মোকি মাউন্টেনের অরণ্যে – কালিপদ মজুমদার |
~ শেষ পাতা ~
|
জাজ পাস থেকে দেখা যমজ লেক - গঙ্গাবল আর নন্দকুল – আলোকচিত্রী- অভিষেক দত্ত
ভালো লাগলে জানান বন্ধুদের |
||