~ ৫ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা - বৈশাখ ১৪২২~
মেয়ের ক্লাস টেনের বোর্ড পরীক্ষার পর কুয়াশামাখা দার্জিলিং-এ কয়েকটা দিন কাটিয়ে এসে 'আমাদের ছুটি'র কাজ শুরু করতে বেশ দেরিই হয়ে গেল এবার। ম্যালের পিছন দিকে রাজভবনের কাছে খাদের গায়ে আমাদের হোটেল। বেরিয়ে বাঁহাতে পায়ে চলার পথ গিয়েছে একেবারে ম্যাল পর্যন্ত। নির্জন রাস্তায় মাঝে মাঝে ভিউপয়েন্টে বসার ব্যবস্থা। সন্ধ্যেবেলায় হোটেলে ফেরার পথে নেমে আসত গাঢ় কুয়াশা, সারা শরীরে বুলিয়ে দিত সিক্ত আদর। হঠাৎ লাইটপোস্টের আলোয় আরও মায়াবী সে, অপার্থিবও। মনে হত পথ আর খাদের সীমা মুছে গিয়েছে - যেন ওই কুয়াশায় ভেসে যেতে পারি অনেক গভীরে কোথাও।
আমার অভিধানে ভ্রমণ শব্দের অর্থ নিয়ত পরিবর্তনশীল - একটা অনুভব। ভ্রমণ আনন্দ, ভালবাসা, দুঃখ এমনকী প্রতিবাদও বয়ে নিয়ে আসে। কেমন করে দেখব, কী অনুভব করব - আমার ভ্রমণ একেবারেই তাই। এই সংখ্যায় তেমন কিছু অন্যরকম ভ্রমণের কথা বলেছেন অরূপ, কাঞ্চন, শুদ্ধসত্ত্বেরা তাঁদের 'অন্য ভ্রমণ'-এ। 'আরশিনগর'-এ শ্রাবণীর লেখাও ভাবায় বৈকী।
এইসব নানা কিছু ভাবার পাশাপাশি নিজের ছোটবেলা নিয়ে লিখছিলাম একটি পত্রিকার জন্য। লিখতে লিখতে নিজের শিকড় খোঁজার অনুভূতিটা আবার করে তীব্র হল। আমার ছেলেবেলার রূপনারায়ণপুর, ছবির মত স্টেশনটা, ছেলেবেলায় না-ওঠা সেই পাহাড়টা, চেনা ধানক্ষেত, বাড়ির সামনের সেই ঘোড়ানিম গাছটা, চেনা মুখগুলো, চোখে ঝিমধরা রোদ্দুর, ঝমঝম বৃষ্টি আর লেপমোড়া হু হু ঠাণ্ডা। ইচ্ছে হল হঠাৎই একদিন বেরিয়ে পড়ি সেইসবের খোঁজে। কিন্তু আমার শিকড় বোধহয় কোথাও সবটুকু নেই। ছেলেবেলায় রাসবিহারী এভেনিউ-এর উপর গেস্ট হাউসের বারান্দা থেকে দেখা কলকাতার ঘুম-ভাঙা সকাল, চায়ের ভাঁড়ে মাটির গন্ধ, শীতের সবুজ ময়দানে সাদা পোশাকে ক্রিকেটারের দল, শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে ঘোড়ায় চড়া নেতাজি, বাবার সঙ্গে ধর্মতলায় আমিনিয়ার বিরিয়ানি অথবা প্রথম চার্লি-চ্যাপলিনের সিনেমা দেখা লাইট হাউসে, ময়দানে বইমেলা, হাওড়া-শিয়ালদহ স্টেশন থেকে দূরপাল্লার ট্রেনে হোল্ড-অল-জলের কুঁজো সমেত পাড়ি দেওয়া। কিংবা তাও না – বাবা-মায়ের কাছে বারবার শোনা বাংলাদেশের কথা – ঢাকায় বাবার মামাবাড়ি কিম্বা মায়ের চট্টগ্রামের মহামুনি পাহাড়। শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স, বুটিক রেস্তোঁরা, আইপিএল-এর এই কলকাতার পথে আজ আর ছেলেবেলার স্মৃতি মেলাতে পারিনা, জানি আজন্মের চেনা রূপনারায়ণপুরও বদলে গেছে একেবারেই। হয়তোবা পরিচিত মুখগুলোকেও চিনতে পারব না আর। বাংলাদেশে যাব অনেকদিন থেকেই ভাবছি। বাবা-মায়ের চেনা বাংলাদেশ, আমার অনুভূতির বাংলাদেশ হয়তো খুঁজে পাব না, সে দেশে এখন পথে পড়ে থাকে অভিজিত-ওয়াশিকুর-অনন্তবিজয়দের ছিন্নভিন্ন লাশ। তবু শিকড় খোঁজা, সেও এক ভ্রমণ আমার।
ভূমিকম্পে গত কয়েকদিনে বারবার কেঁপে উঠছে মাটি। মারা গেছেন বেশ কয়েক হাজার মানুষ ছোট্ট ওই নেপাল দেশটায় – গুঁড়িয়ে গেছে দরবার স্কোয়ার, ধরহরা মিনারের মত প্রাচীন স্থাপত্য। অজস্র মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে আজ পথের বাসিন্দা। ট্যুরিজম নির্ভর অর্থনৈতিক কাঠামোতে ভ্রমণ, ট্রেকিং, পর্বতারোহণ সবই এখন অনিশ্চিত। অভিষেকের অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্প ট্রেকিং-এর লেখা পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল নেপালের সেই দিনগুলো কবে ফিরবে? সব-হারানোর পরও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসতে ত্রাণের পাশাপাশি কতটা মনোবল দরকার মানুষের?
এমন দিনে ভ্রমণে আনন্দ খুঁজে পাওয়াটা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাই ভ্রমণকে নিয়েই একটু অন্যরকম ভাবনা বারবার ভাবতে চাইছি, পৌঁছে দিতে চাইছি 'আমাদের ছুটি'-র পাঠকদের কাছে। গত চার বছর ধরে চলছে সেভাবেই পথচলা। এবারে পঞ্চম বর্ষের হাঁটা শুরু হল।
- দময়ন্তী দাশগুপ্ত
এই সংখ্যায় -
জীবনে প্রথমবার ট্রেকিং করতে গিয়ে ঘুরেছিলেন হেমকুণ্ড, ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স, বদ্রীনারায়ণ, মানা, বসুধারা, ত্রিযুগী নারায়ণ, কেদারনাথ, গঙ্গোত্রী-গোমুখ ও যমুণোত্রী। ফিরে এসে ডায়েরির পাতায় লিখে রেখেছিলেন ভ্রমণের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কথা। - সুবীর কুমার রায়ের ভ্রমণ ধারাবাহিক 'হিমালয়ের ডায়েরি'-র চতুর্থ পর্ব – "এবার কাহিনি কেদারনাথের" |
~ আরশিনগর ~
ভালোলাগার মন্দারমনি – শ্রাবণী দাশগুপ্ত |
~ সব পেয়েছির দেশ ~
অমরনাথের পথে – সুদীপ্ত দত্ত |
~ ভুবনডাঙা ~
অন্নপূর্ণার চরণতলে – অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় |
~ অন্য ভ্রমণ ~
উত্তর খুঁজছে উত্তরাখণ্ড – কাঞ্চন সেনগুপ্ত |
~ শেষ পাতা ~
চিনাই বিলের সন্ধানে – এ.এস.এম. জিয়াউল হক় |
ডাল লেক, কাশ্মীর - আলোকচিত্রী- শ্রী অরূপ চৌধুরী
ভালো লাগলে জানান বন্ধুদের |
||