~ ৫ম বর্ষ ২য় সংখ্যা - ভাদ্র ১৪২২~
কিছুদিন বাড়িতে থাকলেই মনটা কেমন উড়ুউড়ু করে। সব্বার হয় এটা। দূরপাল্লার রেলগাড়ির দিকে তৃষিত চোখে তাকাই। দ্রুত ছুটে যাওয়া জানলা দিয়ে এক ঝলক দেখতে পাওয়া কোনো মুখ মনকে ক্ষণকালীন নাড়া আর দীর্ঘকালীন বেদনা দিয়ে চলে যায়। ট্রেনের ডাকের তালে তালে মনও উত্তর দেয়, যাই, যাই...। কেউ বেড়াতে যাচ্ছে শুনলেই মনটা চাতকের মতো ছটফট করে ওঠে।
বর্ষার শেষে এসে উৎসবের ঋতুর ক'দিন আগে 'আমাদের ছুটি'-র মেজাজ এবারে খানিক অন্যরকম। একটু ঘরোয়া আবার একটু-বা চেনা পথের বাইরে। ঝরোঝরো মুখর বাদর দিনে দুই বাংলার অজ শহর আর গ্রামে ঘুরে বেড়িয়ে মাটির সোঁদা গন্ধ আর জলের অচেনা ছবি আঁকলেন তপনদা আর রফিকুল। ওড়িশার প্রায় অচেনা 'নৃসিংহনাথ', মহারাষ্ট্রের ম্যাপে আছে অথচ স্থানীয় মানুষজনই নাম জানেননা এমনই অজানা 'মুরুড' কিংবা কেরলের পেরিয়ার লেকের নিমজ্জিত অরণ্য - এইসব পড়তে পড়তে মনটা কেবল যাই যাই করছিল ঘরে বসে বসে।
ছুটন্ত রেলগাড়ির কামরা থেকে বাইরেটা দেখার মতো স্মৃতিগুলো হু হু করে পেছনের দিকে ছুটে যায় - যেন কত কাল, কত যুগ আগের অস্পষ্ট ছায়াছবি মনের পর্দায় ভেসে ওঠে কালকের ঘটনার মত...
বর্ষার একঘেয়ে ঝরঝর শব্দ আর কাদা-জল পেরিয়ে যখন ঘন সবুজের মাঝে মাঝে সাদা কাশের দোলা লাগে তখন মনে কী রকম একটা আনচান-আনচান ভাব জাগে। পুজো আসছে, বেড়াতে যাব। কী মজা ! কী আনন্দ ! স্কুল খুললেই অ্যানুয়াল পরীক্ষা অতএব পড়াশোনা আছে, নতুন পুজোবার্ষিকী আছে, কিন্তু তারপরেও অঢেল সময় আছে কল্পনার -
নিকষ কালো রাত ফুঁড়ে রেলগাড়ি ছুটে চলেছে। এরমধ্যেই জানলার ধারে বসা নিয়ে একপ্রস্থ লড়াই হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে উদার দাদা দাবি ছেড়েই দিয়েছে শেষপর্যন্ত। লড়াই শেষে ক্লান্ত মুখ জানলার গায়ে ঠেকিয়ে তখন নিশ্চিন্দিপুরের বালক অপু হয়ে যাওয়া আর ঘুটেঘুটে অন্ধকারে এক ঝলক যদি আলো দেখা যায় সেই আশায় অপলক তাকিয়ে থাকা। বাতাসে চুল ওড়ে, চোখে কয়লার গুঁড়ো এসে পড়ে। তাতে কী আর যায় আসে! বিশ্বচরাচর দোলে, তাল মিলিয়ে চাকার বাজনার সঙ্গে – তুমি যেমন ভাববে চাকাও সেই একই কথা বলে বলে যাবে। তুমিও দুলবে, দুলবে জলের ভারি বোতলটাও ট্রেনের তালে তালে। ঘোর অনিচ্ছা নিয়ে জ্বলতে থাকা দু'একটা মিটমিটে হলদেটে আলোও নিবে আসবে ক্রমশঃ।
কল্পনা আর ভাবনা মিলিয়ে মাথার মধ্যে সারাদিন একটা নেশা-নেশা আমেজ। এবারেও কি মায়ের সঙ্গে এক বার্থেই শুতে হবে? আরও কতটা বড় হলে একা একা শুতে পাব? মায়ের বকুনি, অনিচ্ছায় শুয়ে পড়া – দুলতে দুলতে ঘুম ঘুম চোখে ভাবা কাল দুপুরে ট্রেনে নাকি স্টেশনে খোপকাটা থালায় খাওয়া হবে। কী সুন্দর ডাল-তরকারি-আচার-টক দই আলাদা আলাদা খোপে ভাগ করা থাকে!
অবশেষে সব অপেক্ষা আর কল্পনার ইতি – আহ্... কালকে আমাদের ট্রেন। বাবা-মা সুটকেস, হোল্ডঅল গুছোচ্ছে, নতুন জামার গন্ধ, দুই ভাই-বোনের মনে অসম্ভব উত্তেজনা। কিচ্ছু ধরতেই দিচ্ছেনা, অন্ততঃ ওয়াটার বোতলে জলটা ভরি? সারা সন্ধে-রাত ঘোরের মধ্যে কাটে। ট্রেনের দুলুনি ক্রমে মনের থেকে শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। মাথার মধ্যে ট্রেনের চাকার তালে বেজে চলেছে... কাল বেড়াতে যাব.... বেড়াতে যাব...যাব...যাব...।
- দময়ন্তী দাশগুপ্ত
এই সংখ্যায় -
"দেখ্তে দেখ্তে উক্ত অশ্বারোহী আমার নিকটবর্ত্তী হলেন। গুঁতো, কিল, লাথি এবং উৎসাহবর্দ্ধক নানারূপ শব্দ ঘোড়ার উপর অজস্রধারে প্রয়োগ কর্ত্তে কর্ত্তে, আমার প্রতি দৃক্পাত মাত্র না করে তিনি আমায় ছাড়িয়ে চলে গেলেন। বিস্ময়ের উপর বিস্ময়! সেই কিললাথিবর্ষী নির্ভীক অশ্বারোহী পুরুষ আর কেউ নয় – শ্রীযুক্ত সদানন্দ দেবশর্ম্মা! তারপর তাঁকে ধরে ওঠা আমার প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে উঠ্ল, এমনি সবেগে, সাবেগে তিনি ঠাণ্ডা পাহাড়ী টাট্যু ছুটিয়ে চলেছেন।" - 'অশ্বপৃষ্ঠে' সরলা দেবী চৌধুরাণীর কলমে |
জীবনে প্রথমবার ট্রেকিং করতে গিয়ে ঘুরেছিলেন হেমকুণ্ড, ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স, বদ্রীনারায়ণ, মানা, বসুধারা, ত্রিযুগী নারায়ণ, কেদারনাথ, গঙ্গোত্রী-গোমুখ ও যমুণোত্রী। ফিরে এসে ডায়েরির পাতায় লিখে রেখেছিলেন ভ্রমণের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কথা। - সুবীর কুমার রায়ের ভ্রমণ ধারাবাহিক 'হিমালয়ের ডায়েরি'-র পঞ্চম পর্ব – "গঙ্গোত্রীর পথে" |
~ আরশিনগর ~
একটি মফঃস্বলী বৃত্তান্ত – দময়ন্তী দাশগুপ্ত |
~ সব পেয়েছির দেশ ~
অলৌকিক রাতে কুয়াশাভেজা মৈনাম-লা – অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় |
হঠাৎ ইচ্ছার নৃসিংহনাথে – সুদীপ চ্যাটার্জি |
~ ভুবনডাঙা ~
বাঙালি মধ্যবিত্তের আমেরিকা দর্শন – সুস্মিতা রায়় |
~ শেষ পাতা ~
মোহময়ী মুরুড – পল্লব ব্যানার্জি |
জঞ্জীরা দুর্গ যাওয়ার পথে - আলোকচিত্রী- শ্রী পল্লব ব্যানার্জি
ভালো লাগলে জানান বন্ধুদের |
||