~ ৯ম বর্ষ ১ম সংখ্যা - বৈশাখ ১৪২৬ ~
খুব গরম। ঘামতে ঘামতে সম্পাদনা করছি একের পর এক লেখা। চোখে পড়ল সূর্যাশিস পালের ছোট্ট ভ্রমণকাহিনি ভরতপুরকে নিয়ে। মনে পড়ে গেল, ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাস।
আগ্রা থেকে বেরিয়ে ফতেপুর সিক্রি দেখে ভরতপুর পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধে হয়ে গিয়েছিল। পরেরদিন আবছা কুয়াশায় মোড়া ঠান্ডার এক সকালে রিক্সাওলা বীরু সিং আমাদের পাখি চেনাতে চেনাতে নিয়ে চলেছে। কুয়াশা কেটে ক্রমশ শীতের নরম রোদ্দুর উঠল। গাছের ডালে ছোট্টখাট্টো স্টার্লিং-এর চঞ্চলতা নজরে পড়ছিল। টিয়ার ঝাঁক একেকটা গাছের ন্যাড়া ডালকে বেশ সবুজ করে রেখেছিল। ঝোপের মাথায় ল্যাজতোলা রবিনও চোখে পড়ছিল মাঝে মাঝেই। কোথাও দূরে পেখম ঝুলিয়ে আলস্যে ময়ূর। ইন্ডিয়ান রোলার বা নীলকন্ঠ পাখি শুনেছি নাকি আজকাল খুব সহজে দেখতে পাওয়া যায় না। দেখা মিলছিল রঙিন ছোট্ট এই পাখিটিরও থেকে থেকেই, একেবারে না খুঁজেই।
রিক্সা থেকে নেমে রাস্তার পাশের বাধা টপকিয়ে জঙ্গলের মাঝে পায়ে চলার সরু কাঁচা পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নিস্তব্ধতা ছাপিয়ে কত যে পাখির কলকাকলি কানে আসছিল কী বলব! জঙ্গলের মধ্যে নজরে এল মগডালে ঈগল বসে রয়েছে শিকারের প্রতীক্ষায়। পাশের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে রাস্তা পেরোতে গিয়ে দূর থেকে আমাদের দেখে বিস্মিত চোখে ঘাড় ঘুরিয়ে পথের ওপর দাঁড়িয়েই চেয়ে রইল চিতল হরিণ। কাছে আসতে দেখে পা চালিয়ে এগিয়ে গেল ময়ূরের দল আর বুনো শুয়োর তার ছেলেপুলেদের নিয়ে। আরও এগোতে বড় এক জলায় নানান জাতের পাখির ভিড় - পেন্টেড স্টর্ক, পার্পল হেরন, ইগ্রেট - আরও কত কী। সাদায়-কালোয় মেশানো নাইট হেরন গাছের ডালে চুপটি করে বসে আপনমনেই। এরই আরেক জাতভাই ছাই রঙা হেরনও পরে চোখে পড়েছিল ঘাসজমিতে। আর জলার ধারে পন্ড হেরন।
ফিরে এসে আবার রিকশা করে মূল রাস্তায় যেতে যেতেই জলার দিকে তাকালে চোখে পড়ছিল নানা ধরণের স্টর্ক, কমন কুট, ডার্টার, আইবিস, করমোরান্ট বা পানকৌড়ি। কোথাও ঘাসজমিতে এলোমেলো পায়ে খাবার খুঁজে ফিরছে মুরহেনের দলবল। জলার মাঝে মাঝে ছোট দ্বীপের মতো জেগে থাকা চড়ায় বাবলা জাতীয় গাছ, তার ডালে পেন্টেড স্টর্কদের বাসা। গাছের ডাল থেকে গম্ভীর মুখে গোল গোল চোখে আমাদের নিঃশব্দে জরিপ করছিল একটি স্পটেড আউল। খানিকদূর যেতে ডানহাতে পড়ল সেলিম আলি ভিজিটর ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার। আর তার পাশে স্যুভেনির সপ। বাঁ হাতে জলার মধ্যে লম্বা লম্বা পা ফেলে খাবার খুঁজতে ঘুরে বেড়াচ্ছে লম্বাগলা বকের দল - ছোট ও বড় প্রজাতির ইগ্রেট। বড় প্রজাতিটির সাদা গায়ে আবার জায়গায় জায়গায় কালো রঙের পোঁচ। চেনা তিতির, ময়না, রেড ভেন্টেড বুলবুল, কাঠঠোকরার পাশাপাশি একসঙ্গে এত অচেনা পাখি চিনেছিলাম যে এদ্দিন পরে লিখতে বসে সবার নাম আর মনে পড়ছে না। যাওয়ার পথে এক জায়গায় জঙ্গলের ভেতরে চোখে পড়ল একটা বুনো শুয়োর মরা হরিণ ভোজনে ব্যস্ত।
দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছিল। রাস্তার শেষপ্রান্তে ওয়াচ টাওয়ার। রিকশা বাঁ হাতে বেঁকতেই এবারে টানা শুধু জলা। জলার মধ্যে নানা জাতের হাঁস, মাছরাঙা। কত প্রজাতির হাঁস – স্পট বিলড ডাক, র্যাডিশেল ডাক, পিনটেল, বার হেডেড গুজ, হাঁসের দলের মাঝে ভেসে বেড়াচ্ছে পানকৌড়িরাও। দূরে এক ছোট্ট দ্বীপে হাঁসেদের মাঝে বসে এক ডালমেশিয়ান পেলিকান। জলার পাড়ে ওয়াচটাওয়ারে উঠি। শীতের ছোট দিনে পড়ন্ত বিকেলের আলো এসে পড়েছে জলে। মাথার ওপর দিয়ে আওয়াজ করে পাখির দল উড়ে যাচ্ছে যেন বলতে বলতে, 'পাহাড়তলি কে যাবে? পাহাড়তলি!'
অমনি খেয়াল পড়ল আরে কোথায় শীতের বিকেলশেষের ভরতপুর, আমি তো ঘোর গরমের দুপুরে কলকাতাতেই! আশা করি পাঠকদেরও 'আমাদের ছুটি'-র এই সংখ্যার লেখাগুলি অন্য কোথাও, অন্য কোনখানে নিয়ে যেতে পারবে। ভালো থাকুন সক্কলে।
- দময়ন্তী দাশগুপ্ত
এই সংখ্যায় -
"রাস্তা বেজায় উঁচু নীচু ব'লে আমরা পরস্পর ছাড়াছাড়ি হ'য়ে পড়্তে লাগ্লাম। দেখ্তে ভারী মজা লাগছিল - কেমন ক'রে মাঝে-মাঝে একজন হেল্তে-দুল্তে অতি কষ্টে চড়াইয়ের উপর উঠ্ছে আবার সমুদ্রের জাহাজের মতন প্রথমে পিছনের চাকা, কম্বল, পরে পিঠ ও শেষে টুপি অদৃশ্য হ'য়ে যাচ্ছে।" - শ্রী অশোক মুখোপাধ্যায়ের লেখনীতে "সাইকেলে কাশ্মীর ও আর্য্যাবর্ত্ত" |
~ আরশিনগর ~
পুরুলিয়ার পথে পথে – মলয় সরকার |
~ সব পেয়েছির দেশ ~
গোয়েচা লা-র পথে – সুদীপ্ত ঘোষ |
নীলাকুরিঞ্জির খোঁজে – গার্গী মন্ডল |
~ ভুবনডাঙা ~
পুরাভিদা কোস্টারিকা – শ্রাবণী ব্যানার্জি | |
~ শেষ পাতা ~
গোয়েচা লা ট্রেক - জোংরি থেকে কোকচুরাং-এর পথে - আলোকচিত্রী শ্রী সুদীপ্ত ঘোষ
ভালো লাগলে জানান বন্ধুদের |
||