~ ৪র্থ বর্ষ ৩য় সংখ্যা - কার্ত্তিক ১৪২১ ~
দিনের পর দিন সংবাদপত্রের পাতায় প্রকৃতির রোষের ভয়াল রূপ আর মানুষের অমানবিকতার ছবি দেখতে দেখতে আর খবর পড়তে পড়তে ভ্রমণ পত্রিকার সম্পাদকীয় লেখাটা এই পুজো-ঈদ-দীপাবলীর মরশুমেও ভীষণ কঠিন লাগছিল। কাকলি সেনগুপ্তের লেখাটা পাওয়ার পর মনে হল তা সম্ভব। তাঁর ভাষাতেই বলি, "ইতিহাস আমাদের দেখিয়েছে মানুষ মানুষকে কতটা আঘাত করতে পারে, মনুষ্যত্বের কতটা অবমাননা হতে পারে। সেটা সমগ্র পৃথিবীর পক্ষে কী ভীষণ ক্ষতিকর! তবু মানুষ বারবার ভুল করে। নৃশংস আক্রমণের হাত থেকে স্কুল-হসপিটালও ছাড় পায়না। স্কুলে পড়তে গিয়ে বাচ্চারা আর বাড়ি ফিরে আসেনা। বোমার আঘাতে নিহত শিশুদের দেহে মর্গ উপচে পড়ে, দেহ রাখতে হয় আইসক্রীমের ফ্রিজারে। একজন মা হিসেবে নিজেকে তখন খুব অসহায় মনে হয়"। তবু শেষ পর্যন্ত আশার আলো দেখেছেন এবং দেখাতে চেয়েছেন কাকলি। ভ্রমণ কাহিনিটি অন্য মাত্রা পেয়েছে সেখানেই।
বন্যাবিধ্বস্ত কাশ্মীর ও সাইক্লোন-পরবর্তী অন্ধ্র-ওড়িশা উপকূলের পরিস্থিতি খুবই মর্মন্তুদ। কিন্তু বিষয়টা আরও দুঃখজনক হয়ে ওঠে যখন কাশ্মীর বলেই কিছু মানুষ সরবে অথবা নীরবে মনে করেন বেশ হয়েছে। দুর্যোগের রেশ যতদিন চলবে ততদিন সাহায্য আসবে, ত্রাণ আসবে, তারপর আমরা ধীরে ধীরে ভুলে যাব। আর ওদিকে প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা কাটিয়ে উঠে নিজের ঘর-দোকান-আজীবনের সঞ্চয়, জলের নীচে হারিয়ে যাওয়া ফসলি জমি, পালিত পশু - বেঁচে থাকার উপাদানগুলির পুনর্নির্মাণে হয়তো এই জায়গাগুলির সাধারণ মানুষের অনেকের বাদবাকী জীবনটাই কেটে যাবে। বেড়াতে যেতে ভালবাসি তো আমরা সকলেই, তাহলে সেখানকার মানুষদের সহমর্মী কি আমরা হতে পারি না?
'ভ্রমণ'-এর অন্যতম উদ্দেশ্য 'দেখা'। আমি কী দেখছি আর কীভাবে দেখছি সেই অভিজ্ঞতার ওপরেই নির্ভর করবে আমার ভ্রমণ কাহিনির গড়ে ওঠা - তা কোন জায়গার প্রাকৃতিক দৃশ্য, ইতিহাসের নিদর্শন যেমন হতে পারে, তেমনি স্থানীয় মানুষজন, তাদের সুখ-দুঃখ, সেখানকার সমাজ পরিস্থিতি - এরকম যে কোন কিছুই হতে পারে। 'কোথায় যাবেন', 'কী দেখবেন', 'কোথায় থাকবেন', 'কী খাবেন', 'কী কিনবেন' -এর বাইরে বেরিয়ে আমরাই পারি 'অন্যরকম দেখা'-য় পৃথিবীকে দেখতে। যেভাবে দেখেছিলেন মার্কো পোলো, হিউয়েন সাঙ, ইবন বতুতা কিংবা স্বর্ণকুমারী, রবীন্দ্রনাথ, বিভূতিভূষণ এবং আরও অনেকেই। আজকের দিনের আমরা যাঁদের চোখে দেখি-জানি সেদিনের জগৎটাকে।
কে বলতে পারে এই মুহূর্তে কারও দেখার চোখে আজকের কলকাতা ইতিহাস হয়ে উঠছে না?
এবছর ঊনবিংশ শতকের তিন স্বনামধন্য বাঙালি মহিলা অবলা বসু, কৃষ্ণভাবিনী দাস এবং কামিনী রায়ের জন্মের সার্ধশতবর্ষ। এঁদের মধ্যে 'ইংলণ্ডে বঙ্গমহিলা' খ্যাত কৃষ্ণভাবিনী বাদে বাকী দুজনকে ভ্রমণ লেখিকা হিসেবে আমরা চিনি না। কামিনী রায় ভ্রমণ লেখিকা ননও। তাঁর একটি মাত্র ভ্রমণ কাহিনির খানিকটা পাওয়া যায় পুরোনো এক সাময়িকপত্রে। অবলা বসু অবশ্য স্বর্ণকুমারী দেবীর মতই দীর্ঘদিন ধরে পত্রপত্রিকায় ভ্রমণ কাহিনি লিখেছিলেন। কিন্তু তাঁর মূল লেখাগুলির অধিকাংশই আজ দুষ্প্রাপ্য। কৃষ্ণভাবিনীর বইটি একাধিকবার পুনঃপ্রকাশিত হলেও সাময়িকপত্রে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়ে গেছে অনেক টুকরো লেখাই যা তাঁর বিলেত ভ্রমণের অনুষঙ্গে লেখা হয়েছিল। এই সংখ্যায় তিন লেখিকার তিনটি দুষ্প্রাপ্য ভ্রমণ কাহিনি - 'আমাদের ছুটি'-র তরফে আজকের পাঠকের জন্য।
উৎসবের দিনগুলো ভালো কাটুক সব্বার... পাশাপাশি হোক কলরব-ও।
- দময়ন্তী দাশগুপ্ত
এই সংখ্যায় -
"...কাছে গিয়ে দেখা গেল, দূর থেকে যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই, দুধের পুরু সর অদ্ভুত কায়দায় দুটো কাঠির সাহায্যে তুলে নেওয়া হচ্ছে কড়াই থেকে, চারভাঁজ করে শালপাতার বাটির ওপর রেখে অল্প একটু চিনি ছড়িয়ে হাতে তুলে দিল দোকানি, আঃ! কী দারুণ খেতে।" - আড্ডা দিলেন ফেসবুক গ্রুপের বন্ধুরা |
"জাপান দেশটী প্রকৃতির এক রম্য কানন। ইহার প্রতি বৃক্ষলতা, প্রতি গিরিনির্ঝর, প্রতি গৃহ সৌন্দর্যময়। প্রকৃতিদেবী এই দেশের উপর তাঁহার ভাণ্ডারের সমুদয় সৌন্দর্য্য রাশি অজস্র ধারায় বর্ষণ করিয়াছেন..." - 'জাপান ভ্রমণ' – অবলা বসুর কলমে "বাহির হইতে দেখিতে বিলাতের রাজধানীটী বড় সুন্দর নয়। উহাতে আমাদের সহরের মত ধপধপে চুণকাম করা বড় বড় বাড়ী নাই, আর তাহাতে সবুজ খড়খড়ের বাহারও নাই। যেখানে যাও দেখিবে রাস্তার দুই পার্শ্বে কেবল এক রকম ধোঁয়াটে রঙের কাল কাল বাড়ী, সার বেঁধে দাঁড়াইয়া আছে।" - 'বিলাতের গল্প' – কৃষ্ণভাবিনী দাসের লেখনীতে "এবার রেলের দুই পার্শ্বস্থ বালুকারাশি জ্যোৎস্নালোকে এমন সুন্দর দেখাইতেছিল যে আমরা দেখিয়া আর চক্ষু ফিরাইতে পারি নাই - ; ঠিক বোধ হইতেছিল যেন আমরা শুভ্রফেণ অচঞ্চল জলরাশির মধ্য দিয়া চলিয়া যাইতেছি।" - 'দার্জ্জিলিং ভ্রমণ' – কুমারী কামিনী সেনের কথায় |
~ চরৈবতি ~
জীবনে প্রথমবার ট্রেকিং করতে গিয়ে ঘুরেছিলেন হেমকুণ্ড, ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স, বদ্রীনারায়ণ, মানা, বসুধারা, ত্রিযুগী নারায়ণ, কেদারনাথ, গঙ্গোত্রী-গোমুখ ও যমুনোত্রী। ফিরে এসে ডায়েরির পাতায় লিখে রেখেছিলেন ভ্রমণের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কথা। - সুবীর কুমার রায়ের ভ্রমণ ধারাবাহিক 'হিমালয়ের ডায়েরি'-র এবারে দ্বিতীয় পর্ব – "ফুলের দেশে কিছুক্ষণ" |
~ আরশিনগর ~
~ সব পেয়েছির দেশ ~
~ ভুবনডাঙা ~
কানাডার তুষাররাজ্যে কয়েকদিন – অয়ন চৌধুরী |
~ শেষ পাতা ~
আশ্চর্য সরোবর মূলকারখা – প্রীতম সাহা |
জয়গড় দুর্গ – জয়পুর, রাজস্থান
আলোকচিত্রী - রত্নদীপ দাশগুপ্ত
ভালো লাগলে জানান বন্ধুদের |
||